প্রতিবাদের ভাষায় কিভাবে ডিম যুক্ত হলো
রাজনীতিতে বা বিক্ষোভে ডিম নিক্ষেপ একটি পুরোনো এবং প্রতীকী প্রতিবাদ। সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই প্রবণতা বাড়লেও, এর ইতিহাস বহু পুরোনো এবং বৈশ্বিক। কেবল একটি সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে এটি কীভাবে প্রতিবাদের শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, তা দেখবার বিষয় বটে। আর দলীয় বিরোধী শক্তির প্রতি ক্ষোভ দেখাতে বা আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের উপর প্রতিবাদ জানাতে ডিম নিক্ষেপের ঘটনাইবা আসলো কোথা থেকে।
ডিম, যা সাধারণত রান্নাঘরে ব্যবহার হয়, তা প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক মঞ্চে একটি প্রতীকী অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। এর কারণ হলো এটি সস্তা, সহজলভ্য এবং খুব দ্রুত দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। বিশেষ করে টমেটো বা ডিম ফেটে গেলে দৃশ্যটি আরও নাটকীয় হয়, যা প্রতিবাদের ক্ষোভ এবং বার্তা সহজে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
ডিম নিক্ষেপের ইতিহাস বহু পুরনো। মধ্যযুগে বন্দিদের ওপর জনসম্মুখে ডিম ছোড়ার কথা শোনা যায়। লিখিত সূত্রে এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮শ শতকের গোঁড়ার দিকে। ১৮৩৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্ববিরোধী বক্তা জর্জ হোয়াইটারকে ডিম ছোড়ার ঘটনা নথিভুক্ত আছে।
বিশ্বজুড়ে এমন আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো—১৯১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিলি হিউজকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া এবং ২০০১ সালে ব্রিটিশ উপ-প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকটের দিকে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা, যেখানে তার প্রতিক্রিয়ায় ঘুষি দেওয়ার ছবিটি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তৈরি করেছিল।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যান্ড্রু গেলম্যান এই ধরনের খাদ্য নিক্ষেপকে ব্যাখ্যা করে বলেন, এটি একটি অহিংস প্রতিবাদ। ডিম বা টমেটো নিক্ষেপ করলে পুলিশের পক্ষে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ জনমনে তা ‘ফুলিস’ বা হাস্যকর বলে মনে হতে পারে। ফলে এই প্রতিবাদের একটি প্রতীকী মূল্য আছে, যা পুলিশি বলপ্রয়োগের ঝুঁকি কমায়।
সব মিলিয়ে, ডিমের মাধ্যমে প্রতিবাদ শুধু ক্ষোভের প্রকাশ নয়, এটি একটি কার্যকর, সস্তা এবং দ্রুত নজর কাড়ার মাধ্যম। ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ, যেমন কৃষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মীরা এই সহজ উপকরণটিকে প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
Post a Comment