Top News

স্ত্রী ও নবজাতকের পাশে থাকতে ১৫ দিনের পিতৃত্বকালীন ছুটির প্রস্তাব

স্ত্রী ও নবজাতকের পাশে থাকতে ১৫ দিনের পিতৃত্বকালীন ছুটির প্রস্তাব
সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নারীরা ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পেলেও পুরুষদের পিতৃত্বকালীন ছুটি নেই। কিন্তু নবজাতক ও তার মায়ের দেখাশোনা ও মানসিক সহায়তার জন্য বাবাকেই বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয়। তবে ছুটি না থাকায় অনেকে পড়েন বিপাকে। তাই ১৫ দিনের পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ প্রস্তাব দিয়ে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। ডিসি সম্মেলন থেকে প্রস্তাবনা

জানা গেছে, ২০২৪ সালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান করার প্রস্তাব দেন টাঙ্গাইলের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন। প্রস্তাবে তিনি বলেন, কর্মজীবী নারীদের জন্য ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি কার্যকর করা হয়েছে। মা ও নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যার জন্য পিতার সময় দেওয়া জরুরি। এজন্য ১৫ দিনের ছুটির বিধান করা যেতে পারে।

এরপর বিস্তারিত আলোচনা শেষে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টি জেলা প্রশাসক সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত মধ্যমেয়াদি সিদ্ধান্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে অনুযায়ী ১৫ দিনের পিতৃত্বকালীন ছুটির প্রস্তাব করা হয়েছে। কেন প্রয়োজন পিতৃত্বকালীন ছুটি

প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপে পিতৃত্বকালীন ছুটির যৌক্তিকতার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সারসংক্ষেপে বলা হয়, সরকারি পর্যায়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি থাকলেও কর্মজীবী পিতাদের পিতৃত্বকালীন ছুটি নেই। পিতৃত্বকালীন ছুটি হচ্ছে এমন এক ধরনের ছুটি যা নতুন বাবা হওয়ার পর নবজাতকের ও নতুন মায়ের যত্ন নেওয়ার জন্য দেওয়া হয়। জন্মের পর শিশুকে যত্ন করার জন্য এটা বাবার এক ধরনের অধিকার। বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালে মাতৃত্বকালীন ছুটি চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করেছে। একজন মা চাকরি জীবনে মোট দুইবার এ ছুটি পান।

বর্তমানে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টিও বিভিন্নভাবে আলোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশে অল্প কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন– ব্র্যাক, আড়ং ও সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় পিতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান করছে।

যেসব পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করেন, সেসব পরিবারে পিতৃত্বকালীন ছুটি খুবই জরুরি। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে সাংসারিকভাবে সচ্ছল থাকতে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বাড়ির বাইরে কাজ করেন। স্ত্রী যদি চাকরিজীবী নাও হন, তাহলেও দেখা গেছে পিতৃত্বকালীন ছুটি কাটানোর পর কর্মস্থলে বেশি মনোযোগ দিতে পারেন বাবারা।

সন্তান জন্মের পর বেশ কিছুদিন মায়েরা শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং মানসিকভাবে বিষণ্ন থাকেন। স্বামীর উপস্থিতি ও যত্নে মা মানসিক প্রশান্তি লাভ করেন এবং নবজাতকের সঙ্গে উভয়ের বন্ধন দৃঢ় হয়।

সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জন্মের হার দেশে অনেক বেশি। তাই জন্ম নেওয়ার পর নবজাতক ও নতুন মা অনেকটা নাজুক অবস্থায় থাকে। এ পর্যায়ে ন্যূনতম অবহেলায় তাদের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হতে পারে। নবজাতক ও তার মায়ের দেখাশোনা ও মানসিক সাপোর্টের জন্য এসময়ে বাবা হচ্ছেন সর্বোত্তম সহায়। কর্মজীবী বাবার ক্ষেত্রে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান না থাকায় নবজাতক ও তার মায়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যা উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

পরিবারকে সমর্থন করার জন্য বিশ্বজুড়ে পিতৃত্বকালীন ছুটি ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকৃত হচ্ছে। পিতৃত্বকালীন ছুটি সাধারণত মাতৃত্বকালীন ছুটির চেয়ে অনেক কম হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীদের চাকরি জীবনে দুইবার অন্তত ১৫ দিন পূর্ণ গড় বেতনে পিতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান আবশ্যক। এ ছুটি সন্তান জন্মানোর সম্ভাব্য তারিখ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত যেকোনো ১৫ দিন একটানা নিতে পারবেন। পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রয়েছে ৭৮টি দেশে

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে বলা হয়, বিশ্বের প্রায় ৭৮টি দেশে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রয়েছে বলে আইএলও’র ২০১৪ সালের এক প্রতিবেদন এসেছে।

ভারতে সরকারি চাকরিরত পুরুষরা শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে বা জন্মের ছয় মাসের মধ্যে ১৫ দিনের পূর্ণ বেতনে ছুটি পান। চাকরি জীবনে দুইবার তারা এ ছুটি পান। পাকিস্তানেও পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রয়েছে এক মাস করে। তিনবার এ ছুটির সুযোগ পান দেশটির পুরুষ কর্মজীবীরা। ভুটানেও অন্তত ১০ দিন পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রয়েছে। শ্রীলঙ্কায়ও পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয়।

মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি উভয় ক্ষেত্রেই ইউরোপের দেশগুলো সবচেয়ে এগিয়ে আছে। মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটির জন্য সেরা দেশ হিসেবে পোল্যান্ড ও স্পেন শীর্ষস্থান দখল করে আছে। অইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। স্পেনে ১০০ শতাংশ বেতনসহ ১২ সপ্তাহের পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয়, যা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

বিধি সংশোধন প্রয়োজন

বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস (পার্ট-১)-এর রুলস ১৯৭-এর (সাব-রুলস-১)-এ মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। বিদ্যমান বিধিতে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান নেই। বিদ্যমান বিধিতে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান তৈরির লক্ষ্যে সাবরুল সংশোধন করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

আর বিধি সংশোধনের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন প্রয়োজন। এজন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

অসুস্থ স্ত্রী-সন্তানকে রেখেও করতে হয় অফিস

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশে এখন সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে অধিকাংশ শিশুর জন্ম হয়। মা ও শিশুকে দেখাশোনার জন্য তার পিতাই প্রধান ভরসা। এজন্য পিতৃত্বকালীন ছুটির প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, পিতৃত্বকালীন ছুটি না থাকায় অনেক সময় দেখা যায় অসুস্থ স্ত্রী বা সন্তানকে রেখে অফিস করতে হয়। এটা অনেক কষ্টের। বিষয়টি বিবেচনা করেই পিতৃত্বকালীন ছুটির প্রস্তাব করা হয়েছে।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post