কেয়ামতের দিন মানুষ নিজের তিন পাশে যা দেখতে পাবে
যখন কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে তখন নভোমণ্ডল-ভূমণ্ডলের সবকিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। সেদিন সূর্য মানুষের নিকটবর্তী হবে, মানুষের শরীর হতে নির্গত ঘাম তাদের নাক-মুখ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এ ছাড়াও তখন দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে এবং এর মাধ্যমে বান্দাদের আমলসমূহ মাপা হবে।আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘তারপর যখনই শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে, তখন তাদের মধ্যে আর কোন আত্মীয়তা বা সম্পর্ক থাকবে না এবং তারা পরস্পরকে জিজ্ঞাসাও করবে না৷ সে সময় যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই হবে এমনসব লোক যারা নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে৷ তারা জাহান্নামে থাকবে চিরকাল’। (সূরা মুমিনূন, ১০১-১০৩)আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের ভালমন্দ কাজের আমলনামা আমি তার গলায় ঝুলিয়ে দিবো এবং কেয়ামতের দিন তার জন্য বের করবো একটি কিতাব, যাকে সে খোলা আকারে পাবে। বলা হবে, পড়ো নিজের আমলনামা নিজেই। আজ নিজের হিসাব করার জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট’। (সূরা বানী ইসরাঈল, ১৩-১৪)নবি (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামত অবশ্যই কায়েম হবে। তা এমন সময় যে, কাপড়ের দোকানে ক্রেতা বিক্রেতার সামনে কাপড় দেখার জন্য মেলে ধরবে, কিন্তু দরদামও শেষ করতে পারবে না, কাপড় গুটাতেও পারবে না; এক ব্যক্তি দুধ দোহন করে ঘরে নিয়ে বসবে, কিন্তু তা পান করতে পারবে না; এক ব্যক্তি হাউজ মেরামত করবে, কিন্তু তা থেকে পানি পান করতে পারবে না; এক ব্যক্তি লোকমা তুলবে, কিন্তু তা মুখে দিতে পারবে না এমন অবস্থায় কেয়ামত কায়েম হবে।’ (বুখারি: ৬৫০৬)আদী ইবন হাতিম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মাঝে এমন কোন ব্যক্তি নেই যার সঙ্গে তার রব কেয়ামতের দিন কথা বলবেন না। তখন তার এবং তার রবের মাঝে কোন অনুবাদকও থাকবে না।
পরে সে তার ডান পাশে তাকাবে কিন্তু যা সে আগে করে পাঠিয়েছিল তা ছাড়া আর কিছুই সে দেখবে না। এরপর সে তার বাম দিকে তাকাবে কিন্তু যা সে আগে করে পাঠিয়েছিল তা ছাড়া আর কিছুই সে দেখবে না। এরপর সে তার সামনের দিকে তাকাবে সামনে তখন জাহান্নামকে পাবে সে।
রাসুল (স.) বলেন, একটি খেজুরের সামান্য অংশ দান করেও তোমাদের যে ব্যক্তি নিজেকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করতে পারে সে যেন তা করে। (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৮৫)পরকালে নেকীর পাল্লা ভারি করার মতো একটি আমল সম্পর্কে এক হাদিসে ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে—
একদিন সকালে রাসুল সা. উম্মুল মুমিনিন জুয়াইরিয়া রা.-এর ঘর থেকে বের হন। তখন জুয়াইরিয়া রা. নিজের নামাজের স্থানে ছিলেন। অতঃপর রাসুল সা. ফিরে আসেন। তখনও জুয়াইরিয়া রা. নামাজের স্থানে ছিলেন।
অতঃপর রাসুল সা. আবার বের হন এবং আবার ফিরে আসেন। তখনও জুয়াইরিয়া রা. নামাজের স্থানে ছিলেন। তখন রাসুল সা. বলেন, ‘তুমি কি এখনো তোমার নামাজের স্থানে রয়েছ!’ জুয়াইরিয়া রা. বলেন, হ্যাঁ।
রাসুল সা. বলেন, ‘আমি তোমার স্থান থেকে গিয়ে চারটি বাক্য তিনবার পড়েছি। এ সময়ে তুমি যা পড়েছ তার সঙ্গে ওইসব বাক্যের ওজন করা হলে তাই ভারী হবে।’ অতঃপর তিনি দোয়াটি পড়েন। দোয়াটি হলো—سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ، وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ
উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি, ওয়ারিদা নাফসিহি, ওয়াজিনাতা আরশিহি, ওয়ামিদাদা কালিমাতিহি।
অর্থ : আমি আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি, তার সৃষ্টির সংখ্যা সমপরিমাণ, মহান সত্ত্বার সন্তুষ্টির পরিমাণ, তার আরশের ওজন পরিমাণ এবং তার বাক্যগুলোর কালির পরিমাণ। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫০৩)
Post a Comment